পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) সহযোগী অধ্যাপক ড. এবিএম সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা পদ নিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ড, স্বেচ্ছাচারিতা ও সহিংসতার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং প্রশাসনের একাংশ তাঁর আচরণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এক সময় প্রশাসনের রোষানলে পড়ে চাকরি হারিয়েছিলেন পবিপ্রবির শিক্ষক ড. এবিএম সাইফুল ইসলাম। দীর্ঘ ১০ বছর পর ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনি চাকরি ফিরে পান এবং সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ক্ষতিপূরণ হিসেবে পান ৯৫ লাখ টাকা এবং অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ছাত্র বিষয়ক উপ-উপদেষ্টা ও বিএনসিসির মতো সংগঠনের নেতৃত্ব পান।
তবে সম্প্রতি তাঁর আচরণবিধি লঙ্ঘন, প্রশাসনিক কাজে অতিরিক্ত প্রভাব বিস্তার এবং ছাত্ররাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একাংশের অভিযোগ, একাডেমিক কাজে মনোযোগ না দিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদ দখল এবং কর্তৃত্ব বিস্তারে সক্রিয়।
গত ৪ আগস্ট রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মো. ইকতিয়ার উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ইকোনমিক্স অ্যান্ড সোসিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সুজাহাঙ্গির কবির সরকারকে ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলে, সাইফুল ইসলাম ক্ষুব্ধ হন। অভিযোগ রয়েছে, এরপর তিনি ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টার কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পদটি পাওয়ার জন্য প্রফেসর জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর থেকেই তিনি সক্রিয় ছিলেন। তালা দেওয়ার ঘটনা স্বীকার করে সাইফুল ইসলাম বলেন, “প্রশাসন যদি ইনভেন্টরি কমিটি গঠন করে, আমি কেবল ওই কমিটির কাছেই চাবি হস্তান্তর করব।”
৬ আগস্ট তিনি ছাত্র বিষয়ক উপ-উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধে “জামাতিকরণ” অভিযোগ তোলেন। তবে উপাচার্য প্রফেসর কাজী রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতে বিএনপি পন্থী ও ৫টিতে জামাতপন্থী শিক্ষক রয়েছেন। নিজের স্বার্থে বিভ্রান্তিকর অভিযোগ তোলা দুঃখজনক।”
প্রশাসনের তথ্যমতে, অধ্যাপক সুজাহাঙ্গীর গ্রেড-২-এর অধ্যাপক এবং বিদেশ থেকে পিএইচডি ও পোস্ট-ডক ডিগ্রিধারী, অন্যদিকে সাইফুল ইসলাম গ্রেড-৪-এর সহযোগী অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ থেকে পিএইচডি ডিগ্রিধারী।
বিএনপি পন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ইউট্যাবের স্থানীয় সভাপতি প্রফেসর ড. মামুন অর রশিদ বলেন, “আমাদের মধ্যে কোনো বিভাজন হবে না, আমরা একসাথে কাজ করছি।” প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এস এম হেমায়েত জাহান বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে আমরা ঐক্য ধরে রাখার চেষ্টা করছি।”
শিক্ষার্থী হুসাইন আল মামুন বলেন, “শিক্ষকরা যদি পদ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন, তবে শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষতি হবে।” সাবেক শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমানের মতে, “শিক্ষক নিয়োগ ও পদায়নে রাজনৈতিক পরিচয়ের চেয়ে যোগ্যতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি।”
উপাচার্য প্রফেসর কাজী রফিকুল ইসলাম জানান, “আমি যোগ্যতার ভিত্তিতে পদায়ন করি। কেউ যদি ব্যক্তিগত স্বার্থে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”