কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের শীর্ষ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বিবাদিত সীমান্ত এলাকায় এএসইএন (দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় জাতিসংঘ) পর্যবেক্ষকদের প্রবেশের অনুমতি দিতে এবং পাঁচ দিনের তীব্র সংঘর্ষের পর গত জুলাইয়ের শেষে ঘোষিত যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে সম্মত হয়েছেন। এই চুক্তির লক্ষ্য এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা।
মালয়েশিয়ার পুট্রাজায়ায় সোমবার (৪ আগস্ট) অনুষ্ঠিত আলোচনায় থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা অংশ নেন। মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান জেনারেল মোহ্দ নিজাম জাফর জানান, এই আলোচনায় এএসইএন পর্যবেক্ষক দলের বিস্তারিত কার্যক্রম চূড়ান্ত করা হয়েছে, যারা যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করবে এবং ভবিষ্যতের সীমান্ত সংঘাত এড়াতে সহায়তা করবে। এই আলোচনায় চীন, মালয়েশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে সীমান্ত বিরোধের শিকড় ১৯০৪ এবং ১৯০৭ সালের ফ্রাঙ্কো-সিয়ামিজ চুক্তিতে নিহিত, যা সিয়াম রাজ্য (বর্তমান থাইল্যান্ড) এবং ফরাসি ইন্দোচীন (বর্তমান কম্বোডিয়া, লাওস এবং ভিয়েতনাম) এর মধ্যে সীমানা নির্ধারণ করেছিল। ১৯৬২ সালে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) প্রিয়াহ বিহার মন্দিরের সার্বভৌমত্ব কম্বোডিয়ার পক্ষে রায় দেয়, তবে আশপাশের এলাকার সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিরোধ অমীমাংসিত থেকে যায়। ২০০৮ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে উভয় দেশে জাতীয়তাবাদী উত্তেজনার কারণে একাধিক সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন সৈন্য ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। ২০২৫ সালের ২৮ মে চং বক পাসে সংঘর্ষের পর উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, যা ২৪ জুলাই থেকে পূর্ণাঙ্গ সশস্ত্র সংঘাতে রূপ নেয়।
২৮ জুলাই মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের মধ্যস্থতায় এবং যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের চাপের মুখে উভয় দেশ একটি “তাৎক্ষণিক ও নিঃশর্ত” যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। যুদ্ধবিরতি মধ্যরাত থেকে কার্যকর হয়, তবে থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে, যা কম্বোডিয়া অস্বীকার করেছে। যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে এবং পুনরায় সংঘাত এড়াতে এএসইএন পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। মালয়েশিয়ার নেতৃত্বে এএসইএন পর্যবেক্ষক দল সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার জন্য কাজ করবে, এবং আগামী ৪-৭ আগস্ট জেনারেল বর্ডার কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হবে।
গত জুলাইয়ের সংঘর্ষে অন্তত ৪৩ জন নিহত এবং ৩ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উভয় দেশের মধ্যে জাতীয়তাবাদী উত্তেজনা এবং ঐতিহাসিক বিরোধের কারণে এই যুদ্ধবিরতি ভঙ্গুর রয়েছে। এএসইএন পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি উভয় পক্ষের মধ্যে আস্থা পুনরুদ্ধার এবং সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্থায়ী শান্তির জন্য সীমান্তের সুনির্দিষ্ট সীমানা নির্ধারণ এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিরসন অপরিহার্য।