দেশের সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে আধুনিক শিল্পের চাহিদাভিত্তিক কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর এবং টেকসই কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) নতুন প্রকল্প SICIP-PKSF-এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের আওতায় ১২,০০০ তরুণকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যার মধ্যে ৩০% নারীদের জন্য সংরক্ষিত। অবশিষ্ট ৭০%-এ নিম্ন আয়ের ও প্রান্তিক অঞ্চলের তরুণরা অগ্রাধিকার পাবেন।
প্রকল্পের অধীনে প্রশিক্ষণার্থীরা ১২টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন, এবং তাদের থাকা-খাওয়ার সম্পূর্ণ ব্যয় প্রকল্প থেকে বহন করা হবে। প্রশিক্ষণ শেষে দক্ষতার ভিত্তিতে আত্মকর্মসংস্থান ও মজুরিভিত্তিক কর্মসংস্থানে সহায়তা প্রদান করা হবে। এছাড়া, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি এবং ২,০০০ এতিম ও দু:স্থ তরুণের জন্য অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ পরিকল্পনাধীন রয়েছে।
২৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে পিকেএসএফ ভবনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন Skills for Industry Competitiveness and Innovation Program (SICIP)-এর পিকেএসএফ অংশের উদ্বোধন ও সহযোগী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি অর্থসচিব ও SICIP-এর জাতীয় প্রোগ্রাম পরিচালক ড. মোঃ খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, “পিকেএসএফ-এর দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম অত্যন্ত প্রশংসনীয়। ১২,০০০ তরুণের প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন হলে সরকার আরও সহায়তা প্রদান করবে। বিদেশে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে, এবং পিকেএসএফ-এর এই উদ্যোগ রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।”
বিশেষ অতিথি মোহাম্মদ ওয়ালিদ হোসেন, অতিরিক্ত সচিব ও SICIP-এর নির্বাহী প্রোগ্রাম পরিচালক, বলেন, “পিকেএসএফ একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। আমরা আশা করি এই প্রকল্পের ১২টি কোর্স সারাদেশে দক্ষতার সঙ্গে বাস্তবায়িত হবে।” তিনি প্রশিক্ষকদের জন্য বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার কথাও উল্লেখ করেন।
পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান বলেন, “বাংলাদেশের জনমিতিক সুবিধা দীর্ঘকাল থাকবে না। এই সুযোগ কাজে লাগাতে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি অপরিহার্য। SICIP-PKSF প্রকল্প সরকারের দক্ষতা উন্নয়ন উদ্যোগে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।”
পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ফজলুল কাদের বলেন, “প্রতি বছর ২০ লক্ষের বেশি তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে, যা একটি চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা। পিকেএসএফ-এর ‘কৌশলগত পরিকল্পনা ২০২৫-২০৩০’-এ দক্ষতা উন্নয়ন একটি প্রধান কৌশল। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-স্বীকৃত পন্থায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মজুরিভিত্তিক ও আত্মকর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে।”
পিকেএসএফ-এর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জসীম উদ্দিন জানান, “১২,০০০ জনের পাশাপাশি আরও ৮,৫০০ জনের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রশিক্ষণের চাহিদা জমা দেওয়া হয়েছে, যেখানে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিরা অগ্রাধিকার পাবেন। এছাড়া, ২,০০০ এতিম ও দু:স্থ তরুণের প্রশিক্ষণ পরিকল্পনাধীন। পিকেএসএফ পুঁজি, প্রযুক্তি ও বাজার সংযোগ সহায়তা প্রদান করবে।”
সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক মোঃ জিয়াউদ্দিন ইকবাল প্রকল্পের বিস্তারিত উপস্থাপনা প্রদান করেন। উল্লেখ্য, পূর্ববর্তী SEIP প্রকল্পে পিকেএসএফ ৩৮,৬৩৩ জনকে সফলভাবে দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে।