বঙ্গোপসাগরে অবৈধ কাঠের ট্রলিং ট্রলার এবং ছোট ফাঁসের অবৈধ জাল ব্যবহার বন্ধের দাবিতে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় রবিবার (২৭ জুলাই, ২০২৫) একটি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১১টায় কুয়াকাটা চৌরাস্তা এলাকায় কুয়াকাটা, মহিপুর এবং কলাপাড়ার জেলে সম্প্রদায়ের উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধনের পর বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পর্যটন পার্কের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
কুয়াকাটার মৎস্য সংশ্লিষ্ট ৭টি সংগঠন, যার মধ্যে আশার আলো মৎস্য সমবায় সমিতি, কুয়াকাটা জেলে সমিতি এবং কুয়াকাটা মাঝি সমিতি উল্লেখযোগ্য। হাজারো জেলে এবং মৎস্য ব্যবসায়ী এতে অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন আশার আলো মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি নিজাম শেখ, কুয়াকাটা জেলে সমিতির সভাপতি আবু হানিফ ঘরামী, কুয়াকাটা মাঝি সমিতির সভাপতি চান মিয়া এবং অন্যান্য জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ী নেতারা।
বঙ্গোপসাগরে অবৈধ কাঠের ট্রলিং ট্রলার এবং ছোট ফাঁসের জাল বন্ধ করা, যা সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য এবং মৎস্য সম্পদের ক্ষতি করছে।
বক্তারা জানান, গত ১০ বছর ধরে কিছু অসাধু জেলে ছোট ফাঁসের অবৈধ জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করছে। এতে সমুদ্রের বিভিন্ন প্রজাতির রেনু পোনা (মাছের বাচ্চা) ধ্বংস হচ্ছে, যা জীববৈচিত্র্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
অবৈধ জালের কারণে ইলিশসহ অন্যান্য মাছের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, যা জেলেদের জীবিকা এবং স্থানীয় অর্থনীতির জন্য হুমকি।
বক্তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে অবৈধ ট্রলিং বন্ধ না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
বঙ্গোপসাগরে অবৈধ মাছ ধরার কারণে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে। ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহারে মাছের প্রজনন চক্র ব্যাহত হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে মৎস্য সম্পদের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাদেশে অবৈধ জাল ব্যবহার এবং নিষিদ্ধ ট্রলিংয়ের বিরুদ্ধে মৎস্য সংরক্ষণ আইন রয়েছে, তবে এই আইনের বাস্তবায়ন দুর্বল। জেলেরা সরকারের কাছে এই আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের দাবি জানিয়েছেন।
কুয়াকাটা, মহিপুর এবং কলাপাড়ার জেলে সম্প্রদায়ের জীবিকা মূলত মাছ ধরার উপর নির্ভরশীল। মৎস্য সম্পদ হ্রাস পাওয়ায় এই সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক সংকট তীব্র হচ্ছে।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণকারী জেলেরা অবৈধ ট্রলিংয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারের হস্তক্ষেপের জন্য চাপ সৃষ্টি করেছেন।
সংবাদটিতে সরকারি কর্তৃপক্ষের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার উল্লেখ নেই, তবে জেলেদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বা স্থানীয় প্রশাসন পদক্ষেপ নিতে পারে।
জেলে নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দাবি পূরণ না হলে আরও বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে, যা স্থানীয় মৎস্য শিল্পের উপর আরও প্রভাব ফেলতে পারে।
কুয়াকাটায় জেলে সম্প্রদায়ের এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ বঙ্গোপসাগরে অবৈধ ট্রলিং এবং জাল ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাবের বিরুদ্ধে তাদের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ প্রকাশ করে। এই কর্মসূচি সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং জেলেদের জীবিকা সুরক্ষার জন্য সরকারি হস্তক্ষেপের জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। অবৈধ ট্রলিং বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি না হলে বঙ্গোপসাগরের মৎস্য সম্পদ এবং স্থানীয় অর্থনীতি আরও সংকটের মুখে পড়তে পারে।