সোনার দাম শুক্রবার (২৫ জুলাই, ২০২৫) সামান্য হ্রাস পেয়েছে, কারণ মার্কিন বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতির লক্ষণ নিরাপদ আশ্রয় সম্পদ (safe-haven asset) হিসেবে সোনার চাহিদা কমিয়েছে। তবে, ডলারের সামগ্রিক দুর্বলতা ক্ষতি সীমিত রেখেছে। সপ্তাহভিত্তিক হিসাবে সোনা মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং ব্যবসায়ীরা আগামী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তগুলোর দিকে নজর রাখছেন।
স্পট গোল্ড ০.১% কমে প্রতি আউন্স ২,৩৬৫.৩০ ডলারে লেনদেন হয়েছে (০৪০১ জিএমটি)। তবে, সপ্তাহে সোনা ০.৫% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত সপ্তাহের ২.১% হ্রাস থেকে পুনরুদ্ধার নির্দেশ করে।
ইউএস গোল্ড ফিউচার ০.১% কমে প্রতি আউন্স ২,৩৬৪.৫০ ডলারে স্থির হয়েছে।
ডলার ইনডেক্স গত সপ্তাহের তিন মাসের সর্বনিম্ন স্তর থেকে পুনরুদ্ধার হলেও সামগ্রিকভাবে দুর্বল ছিল। একটি নরম ডলার অন্যান্য মুদ্রাধারীদের জন্য সোনাকে সাশ্রয়ী করে, যা ক্ষতি সীমিত করতে সহায়তা করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এর মধ্যে সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায় অগ্রগতি নিরাপদ আশ্রয় সম্পদের চাহিদা কমিয়েছে। দুই ইউরোপীয় কূটনীতিক জানিয়েছেন, এই চুক্তিতে ইইউ আমদানির উপর ১৫% বেসলাইন শুল্ক এবং সম্পর্কিত ছাখাত অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মধ্যে সাম্প্রতিক চুক্তি, যা অটো আমদানির শুল্ক ২৫% থেকে ১৫% কমিয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতার আশা জাগিয়েছে। এই ঘটনাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ বাড়িয়েছে, যা সোনার দামের উপর নিম্নমুখী চাপ সৃষ্টি করেছে।
ব্যবসায়ীরা ফেডারেল রিজার্ভের আগামী সভার দিকে নজর রাখছেন, যেখানে সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার প্রত্যাশা রয়েছে। তবে, ফেড চেয়ার জেরোম পাওয়েলের মন্তব্য ভবিষ্যৎ হার কমানোর সম্ভাবনা নির্দেশ করতে পারে, যা সোনার জন্য ইতিবাচক। কম সুদের হার সুদবিহীন সম্পদ হিসেবে সোনার আকর্ষণ বাড়ায়।
আগামী সপ্তাহে BOJ-এর সভায় হার বৃদ্ধির সম্ভাবনা বিবেচনা করা হচ্ছে, যা ইয়েনকে শক্তিশালী করতে পারে এবং সোনার দামের উপর পরোক্ষ প্রভাব ফেলতে পারে।
ECB-এর সাম্প্রতিক মন্তব্যে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতির ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, যা সোনার দামের উপর নিম্নমুখী চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
ইউক্রেন-রাশিয়া শান্তি আলোচনার অগ্রগতির অভাব এবং মার্কিন-চীন বাণিজ্য আলোচনার অনিশ্চয়তা সোনার নিরাপদ আশ্রয়ের চাহিদাকে সমর্থন করছে। তবে, বাণিজ্য আশাবাদ এই প্রভাবকে আংশিকভাবে প্রতিহত করেছে।
এশিয়ায়, বিশেষ করে চীন এবং ভারতে, মৌসুমি চাহিদা (বিয়ের মৌসুম এবং উৎসব) সোনার দামকে সমর্থন করছে। এক্স-এ পোস্টগুলোতে ব্যবহারকারীরা ভারতে সোনার উচ্চ মূল্য (প্রতি ১০ গ্রাম ৭৩,১৪০ টাকা) এবং চীনে শারীরিক চাহিদা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছেন। স্পট সিলভার ০.১% কমে প্রতি আউন্স ২৭.৬৩ ডলার, প্ল্যাটিনাম ০.২% বেড়ে ৯৩১.০৫ ডলার, এবং প্যালাডিয়াম ০.১% কমে ৮৯৮.৮০ ডলারে লেনদেন হয়েছে।
ইউএস ফেডারেল রিজার্ভের মুদ্রানীতির উপর নির্ভর করে সোনার দাম স্বল্পমেয়াদে প্রতি আউন্স ২,৩০০ থেকে ২,৪০০ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করতে পারে। স্টোনএক্স-এর বিশ্লেষক রোনা ও’কনেল বলেন, “যদি পাওয়েল হার কমানোর সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেন, তবে সোনা ২,৪০০ ডলারের দিকে এগোতে পারে।”
সোনা তার ২০০-দিনের মুভিং এভারেজ (২,৩৫০ ডলার) এর কাছাকাছি লেনদেন করছে। এই স্তর ভাঙতে ব্যর্থ হলে দাম ২,৩০০ ডলারের দিকে নামতে পারে, তবে শক্তিশালী সমর্থন ২,৩২৫ ডলারে রয়েছে।
রাশিয়ার উপর সম্ভাব্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং ইইউ-চীন শীর্ষ সম্মেলনে বাণিজ্য উত্তেজনা সোনার নিরাপদ আশ্রয়ের আবেদন বাড়াতে পারে।
সোনার দাম মার্কিন বাণিজ্য আলোচনার আশাবাদের কারণে সামান্য কমলেও, নরম ডলার এবং আসন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তগুলো ক্ষতি সীমিত রেখেছে। সপ্তাহভিত্তিক মূল্য বৃদ্ধি এবং এশিয়ায় শারীরিক চাহিদা সোনার বাজারের স্থিতিস্থাপকতা নির্দেশ করে। বিনিয়োগকারীরা ফেডারেল রিজার্ভ, BOJ, এবং ECB-এর সিদ্ধান্ত এবং ভূ-রাজনৈতিক ঘটনাগুলোর উপর নজর রাখবেন, যা সোনার দামের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।