তেলের দাম বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই, ২০২৫) বেড়েছে, যা মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতি এবং মার্কিন অপরিশোধিত তেলের মজুদে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হ্রাসের কারণে। এই ঘটনাগুলো বিশ্ব অর্থনীতির উপর চাপ কমানোর আশা জাগিয়েছে এবং বাজারে ঊর্ধ্বমুখী গতি প্রদান করেছে।
ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচার ০৬৩০ জিএমটি-তে ৬৪ সেন্ট বা ০.৯% বেড়ে প্রতি ব্যারেল ৬৯.১৫ ডলারে পৌঁছেছে। ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুড ফিউচার ৬৮ সেন্ট বা ১% বেড়ে প্রতি ব্যারেল ৬৫.৯৩ ডলারে দাঁড়িয়েছে। বুধবার উভয় বেঞ্চমার্ক তেমন পরিবর্তিত হয়নি, কারণ বাজার মার্কিন-ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাণিজ্য আলোচনার উপর নজর রেখেছিল, যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাপানের সঙ্গে শুল্ক চুক্তির পরে এসেছে। এই চুক্তি অটো আমদানির উপর শুল্ক কমিয়েছে এবং টোকিওকে নতুন শুল্ক থেকে রেহাই দিয়েছে, বিনিময়ে ৫৫০ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন-মুখী বিনিয়োগ ও ঋণ প্যাকেজ প্রদান করা হয়েছে। নিসান সিকিউরিটিজ ইনভেস্টমেন্টের প্রধান কৌশলবিদ হিরোয়ুকি কিকুকাওয়া বলেন, “ক্রয়ের পেছনে প্রধান কারণ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনায় অগ্রগতির আশাবাদ, যা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি এড়াতে সহায়ক।” তবে, তিনি যোগ করেন, মার্কিন-চীন বাণিজ্য আলোচনা এবং ইউক্রেন-রাশিয়া শান্তি আলোচনার অনিশ্চয়তা আরও বৃদ্ধিকে সীমিত করছে। তিনি পূর্বাভাস দিয়েছেন যে ডব্লিউটিআই সম্ভবত ৬০ থেকে ৭০ ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
মার্কিন এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (EIA) এর তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে মার্কিন অপরিশোধিত তেলের মজুদ ৩.২ মিলিয়ন ব্যারেল কমে ৪১৯ মিলিয়ন ব্যারেলে নেমেছে, যা রয়টার্সের জরিপে বিশ্লেষকদের প্রত্যাশিত ১.৬ মিলিয়ন ব্যারেল হ্রাসের তুলনায় বেশি। গ্যাসোলিন মজুদও ১.৭ মিলিয়ন ব্যারেল কমে ২৩১.১ মিলিয়ন ব্যারেলে দাঁড়িয়েছে, যা প্রত্যাশিত ৯০৮,০০০ ব্যারেল হ্রাসের প্রায় দ্বিগুণ। ডিস্টিলেট মজুদ, যার মধ্যে ডিজেল এবং হিটিং অয়েল রয়েছে, সপ্তাহে ২.৯ মিলিয়ন ব্যারেল বেড়ে ১০৯.৯ মিলিয়ন ব্যারেলে পৌঁছেছে, তবে এটি ১৯৯৬ সালের পর থেকে মৌসুমি সর্বনিম্ন স্তরের কাছাকাছি রয়েছে। এএনজেড বিশ্লেষকরা বলেন, “এটি ইঙ্গিত দেয় যে উত্তর গোলার্ধের গ্রীষ্মে চাহিদা তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী ছিল।”
ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকিগুলো বাজারে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে। মঙ্গলবার মার্কিন শক্তি সচিব জানিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেলের উপর নিষেধাজ্ঞা বিবেচনা করবে। এদিকে, শুক্রবার ইইউ তার ১৮তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের জন্য মূল্যসীমা কমিয়েছে। বুধবার ইস্তাম্বুলে রাশিয়া এবং ইউক্রেন শান্তি আলোচনা করেছে, যেখানে বন্দী বিনিময় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তবে যুদ্ধবিরতি বা নেতাদের সম্ভাব্য বৈঠকের বিষয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বড় পার্থক্য রয়ে গেছে। এছাড়া, নতুন নিয়মের কারণে রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগরের প্রধান বন্দরগুলোতে বিদেশি তেল ট্যাঙ্কারগুলো অস্থায়ীভাবে লোডিং থেকে নিষিদ্ধ হয়েছে, যা মার্কিন শক্তি কোম্পানিগুলোর আংশিক মালিকানাধীন একটি কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে কাজাখস্তানের রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের মধ্যে সাম্প্রতিক বাণিজ্য চুক্তি, যা অটো আমদানির উপর শুল্ক ২৫% থেকে ১৫% কমিয়েছে, বাজারে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করেছে। বুধবার দুই ইউরোপীয় কূটনীতিক জানিয়েছেন, ইইউ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বাণিজ্য চুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যা ইইউ পণ্যের উপর ১৫% বেসলাইন শুল্ক এবং সম্ভাব্য ছাড় অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। এই অগ্রগতি জাপান চুক্তির পর আরেকটি বড় বাণিজ্য চুক্তির পথ প্রশস্ত করতে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতির উপর চাপ কমাবে। তবে, মার্কিন-চীন বাণিজ্য আলোচনার অনিশ্চয়তা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনার অগ্রগতির অভাব তেলের দামের বৃদ্ধিকে সীমিত করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, স্বল্পমেয়াদে ডব্লিউটিআই তেলের দাম ৬০ থেকে ৭০ ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। এই পূর্বাভাস সরবরাহ-প্রত্যাশিত চাহিদা, ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি, এবং চলমান বাণিজ্য আলোচনার উপর ভিত্তি করে তৈরি। যদিও মার্কিন তেল মজুদ হ্রাস এবং বাণিজ্য চুক্তির আশাবাদ বাজারকে সমর্থন করছে, তবে চীন-মার্কিন বাণিজ্য উত্তেজনা এবং রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য প্রভাব বাজারের অস্থিরতা বাড়াতে পারে।
তেলের দামের এই বৃদ্ধি মার্কিন বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতি এবং অপরিশোধিত তেলের মজুদে উল্লেখযোগ্য হ্রাসের ফলাফল। তবে, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং মার্কিন-চীন বাণিজ্য আলোচনার অনিশ্চয়তা বাজারের আরও বৃদ্ধিকে সীমিত করছে। বিনিয়োগকারীরা সরবরাহ-চাহিদার গতিশীলতা এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর নজর রাখছেন, যা তেলের দামের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।