রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা সাত সপ্তাহেরও বেশি সময় পর তুরস্কের ইস্তানবুলে প্রথম সরাসরি শান্তি আলোচনার জন্য বৈঠকে বসছেন। ক্রেমলিন এই আলোচনায় কোনো বড় অগ্রগতির সম্ভাবনা কম বলে সতর্ক করেছে, কারণ উভয় পক্ষের প্রস্তাবনাগুলো পরস্পরের সাথে তীব্রভাবে সাংঘর্ষিক।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই বৈঠকের জন্য তিনটি মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন: যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি, রাশিয়া কর্তৃক অপহৃত শিশুদের ফিরিয়ে আনা এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে একটি শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের প্রস্তুতি। তিনি জানিয়েছেন, ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পরিষদের সেক্রেটারি রুস্তেম উমেরভ এই আলোচনায় ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। এর আগে, মে ও জুন মাসে ইস্তানবুলে অনুষ্ঠিত দুটি আলোচনায় হাজার হাজার যুদ্ধবন্দী এবং নিহত সৈন্যদের দেহাবশেষ বিনিময় হয়েছিল, তবে যুদ্ধবিরতি বা সংঘাত নিরসনের ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, উভয় পক্ষের প্রস্তাবনাগুলো “ডায়ামেট্রিক্যালি বিপরীত” এবং আলোচনা “খুবই কঠিন” হবে। রাশিয়া তার দাবিগুলোর মধ্যে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল (দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া এবং খেরসন) থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীর পূর্ণ প্রত্যাহার, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর আকার সীমিতকরণ, রুশভাষীদের জন্য উন্নত অধিকার এবং ইউক্রেনের নিরপেক্ষ মর্যাদা গ্রহণের শর্ত জুড়েছে।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে জেলেনস্কি একটি তাৎক্ষণিক ও শর্তহীন ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছেন, যখন রাশিয়া বলছে যে যুদ্ধবিরতির শর্তাবলী নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে হুমকি দিয়েছিলেন, যদি ৫০ দিনের মধ্যে কোনো শান্তি চুক্তি না হয়, তবে রাশিয়া এবং তার রপ্তানি ক্রেতা দেশগুলোর উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। তবে, ক্রেমলিনের কাছাকাছি তিনটি সূত্র জানিয়েছে, পুতিন ট্রাম্পের এই হুমকিতে বিচলিত না হয়ে নিজের শর্তে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান এই আলোচনার আয়োজক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তিনি উভয় পক্ষকে শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন, তবে পূর্ববর্তী আলোচনার অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, উভয় পক্ষের মধ্যে গভীর মতপার্থক্যের কারণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন কঠিন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই আলোচনা যুদ্ধবিরতি বা দীর্ঘমেয়াদী শান্তির দিকে একটি পদক্ষেপ হতে পারে, তবে রাশিয়ার দাবি এবং ইউক্রেনের শর্তহীন যুদ্ধবিরতির দাবির মধ্যে বিশাল ব্যবধানের কারণে অগ্রগতি সীমিত থাকতে পারে। তবে, যুদ্ধবন্দী বিনিময়ের মতো ছোট পদক্ষেপগুলো ভবিষ্যৎ আলোচনার জন্য আস্থা তৈরি করতে পারে।