বিশ্বজুড়ে সবুজ হাইড্রোজেন প্রকল্পের পরিকল্পনা উচ্চ উৎপাদন খরচের কারণে বিলম্বিত বা বাতিল হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। এই পশ্চাদপসরণ পরিচ্ছন্ন শক্তি শিল্পের মুখোমুখি আর্থিক ও লজিস্টিক চ্যালেঞ্জগুলোকে তুলে ধরেছে, যা এই শিল্পের সম্প্রসারণের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিভিন্ন দেশে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প বাতিল বা স্থগিত করা হয়েছে। জার্মানিতে, এনার্জি কোম্পানি এলইএজি’র পূর্ব জার্মানিতে অব্যবহৃত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জায়গায় ইউরোপের বৃহত্তম সবুজ শক্তি হাব গড়ার পরিকল্পনা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া, স্টিল নির্মাতা আর্সেলরমিটাল ২.৫ বিলিয়ন ইউরোর পরিকল্পনা বাতিল করেছে, যদিও ১.৩ বিলিয়ন ইউরোর সরকারি ভর্তুকি প্রস্তাব করা হয়েছিল। ফিনল্যান্ডে, তেল পরিশোধন ও জৈব জ্বালানি প্রস্তুতকারী নেস্তে পোর্ভু প্ল্যান্টে পুনর্নবীকরণযোগ্য হাইড্রোজেন উৎপাদনের বিনিয়োগ থেকে সরে এসেছে, বাজারের প্রতিকূল পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে।
অস্ট্রেলিয়ায়, অরিজিন এনার্জি নিউ সাউথ ওয়েলসের হান্টার ভ্যালি হাইড্রোজেন হাব থেকে প্রস্থান করেছে, এবং ট্রাফিগুরা পোর্ট পিরিতে ৭৫০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারের সবুজ হাইড্রোজেন প্ল্যান্টের পরিকল্পনা পরিত্যাগ করেছে। এছাড়া, অস্ট্রেলিয়ার বিলিয়নিয়ার অ্যান্ড্রু ফরেস্টের কোম্পানি ফর্টেস্কিউ ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদনের পরিকল্পনা কমিয়েছে, খরচ এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে।
এই প্রকল্পগুলোর বাতিল বা স্থগিতকরণ সবুজ হাইড্রোজেন শিল্পের সম্মুখীন প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে, যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ উৎপাদন খরচ, দুর্বল চাহিদা, এবং পর্যাপ্ত নীতি সমর্থনের অভাব। বিশ্লেষকদের মতে, এই পশ্চাদপসরণ বিশ্বব্যাপী নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। তবে, অস্ট্রেলিয়ায় ওরিকার নেতৃত্বে একটি সবুজ হাইড্রোজেন প্রকল্পে সরকার ৪৩২ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা এই শিল্পের সম্ভাবনাকে ধরে রাখার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সবুজ হাইড্রোজেনকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কারণ এটি পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে পানি থেকে উৎপাদিত হয় এবং কার্বন নির্গমন করে না। তবে, বর্তমানে বাজারের চ্যালেঞ্জ এবং অর্থনৈতিক অসুবিধার কারণে এই শিল্পের প্রসার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও শিল্প নেতাদের প্রতি আরও কার্যকর নীতি ও আর্থিক সহায়তার আহ্বান জানানো হচ্ছে যাতে সবুজ হাইড্রোজেনের সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো যায়।