বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। এই দেশের মানুষের জীবিকা, পরিবেশ ও অর্থনীতি অনেকাংশেই নদীনির্ভর। আত্রায় নদী উত্তরবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। এর তীরে অবস্থিত রাঙ্গামাটি নামক এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনগণের মাছ ধরার অন্যতম প্রধান স্থান হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নদীতে মাছের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। এর প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত ও অবৈধ মাছ ধরা, জলদূষণ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্যের অভাব। এ অবস্থায় নদীতে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে একটি অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠার দাবি উঠেছে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে।
স্থানীয় জেলেরা জানান, একসময় আত্রায় নদীতে রুই, কাতলা, মৃগেল, আইড়, বোয়ালসহ নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন এসব মাছ পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে। নদীতে জাল ফেলে ডিমওয়ালা মাছ ধরা, কারেন্ট জাল ব্যবহার এবং বিষ প্রয়োগের ফলে মাছের প্রজনন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই অবস্থায় নদীর একটি নির্দিষ্ট অংশে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে অভয়ারণ্য গড়ে তোলার দাবি জানান তারা।
মাছের অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠা করা হলে মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে এবং স্থানীয় জেলেদের জীবিকা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। অভয়ারণ্য তৈরি করলে তা প্রাকৃতিকভাবে মাছের ডিম পাড়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং মাছের প্রজননচক্র স্বাভাবিক হবে। এতে করে আগামী প্রজন্মের জন্যও মাছের নিরাপদ মজুদ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
এলাকাবাসী এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তারা চান সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে রাঙ্গামাটি এলাকায় একটি মাছের অভয়ারণ্য ঘোষণা করুক এবং এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করুক। স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ সংরক্ষণ কর্মীদের সমন্বয়ে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা গেলে তা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের জন্যও একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।
সুতরাং, আত্রায় নদীতে রাঙ্গামাটি এলাকায় একটি মাছের অভয়ারণ্য স্থাপন এখন সময়ের দাবি। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এই উদ্যোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে নিঃসন্দেহে।