ভোলার মাঠে এখন ধান কাটার দৃশ্য যেন এক উৎসবের রূপ নিয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কৃষকরা সোনালি বোরো ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সঠিক সময়ে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষিরা এবার বাম্পার ফলনের মুখ দেখছেন।
ভোলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলার ৬২ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ জমিতে চাষ হয়েছে উন্নত ও উচ্চফলনশীল ব্রি ধান-৭৪।
ইতোমধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। বাকিটুকু আগামী দুই এক সপ্তাহের মধ্যে ঘরে তোলার চেষ্টা চলছে। অনেক জমিতে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন ব্যবহার করে দ্রুত ধান কাটা হচ্ছে। পাশাপাশি মাঠে মাঠেই পাইকারেরা কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করছেন, এতে চাষিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন এবং পরিবহন খরচ ও সময় বাঁচাচ্ছেন।
তুলাতলি এলাকার কৃষক মোকাম্মেল ফরাজী বলেন, “ব্রি ধান-৭৪ এর ফলন দেখে আমরা খুবই খুশি। আগামী মৌসুমে আবারও এই জাতের ধান চাষ করব। ইতোমধ্যে মাঠ থেকে বীজ উপযোগী ধান আলাদা করে রেখেছি, যেন নিজেরাই বীজ সংরক্ষণ করতে পারি।”
সদুরচরে নারী কৃষক ইয়ানুর বেগম বলেন, “আমরা ধানগুলো সংগ্রহ করে বীজ হিসেবে রাখছি। আগের মতো শুধু হাতেই নয়, এবার অনেক জমিতে কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটা হয়েছে। এখন মাঠ থেকেই পাইকাররা ধান কিনে নিচ্ছে, এতে আমরা উপকৃত হচ্ছি।”
শুধু সরকারি কৃষি বিভাগই নয়, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর কৃষি ইউনিটের সহযোগিতায় গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা (জিজেইউএস)–ও মাঠপর্যায়ে প্রদর্শনী প্লট পরিচালনা ও কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদে পরামর্শ প্রদান করছে। এ উদ্যোগের ফলে অনেক কৃষক উন্নত জাতের বীজ ও আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ভালো ফলন পেয়েছেন। এখন অনেক কৃষক নিজেরাই বীজ সংরক্ষণের পদ্ধতি জানেন এবং এতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক মো. খায়রুল ইসলাম মল্লিক জানান, “ব্রি ধান-৭৪ জাতটি অত্যন্ত ফলনশীল ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এ জাতের চাল মাঝারি মোটা, সাদা রঙের, এবং প্রতি কেজিতে ২৪.২ মিলিগ্রাম জিঙ্ক ও ৮.৩ শতাংশ প্রোটিন রয়েছে। এই ধান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।”
তিনি আরও জানান, জাতটির গড় জীবনকাল ১৪৫-১৪৭ দিন এবং গড়ে হেক্টরপ্রতি ফলন হয় ৭.১ টন। কৃষকদের সময়মতো ধান কাটতে পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে যাতে তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ফসল রক্ষা করতে পারেন।
গ্রামীন জন উন্নযন সংস্থার কৃষি ইউনিটের টেকনিক্যাল অফিসার মুরাদ হাসান চৌধুরী জানায়, বিভিন্ন কৃষককে প্রশিক্ষনের পর উন্নত জাতের ব্রী৭৮ জাতের ধানের বীজ দিয়েছে । ফলে কৃষকরা এবার ভালো ফলনের মুখ দেখছে। এ জাত থেকে বীজও সংগ্রহ করতে পারবেন তারা। তাদের সব সময় পরামর্শ দেয়া হয়েছে।