চলতি রবি মৌসুমে ভোলা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মুগ ও ফেলন ডালের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া ছিল অনুকূলে, পোকার আক্রমণ ছিল না বললেই চলে। ফলে কৃষকরা খুব বেশি কোনো সমস্যায় না পড়েই ভালো ফলন পেয়েছেন। মাঠে এখন চলছে ডাল তোলা, শুকানো ও বীজ সংরক্ষণের ব্যস্ততা।
ডাল চাষে কৃষকদের পাশে রয়েছে শুধু সরকারি কৃষি বিভাগই নয়, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর কৃষি ইউনিটের সহযোগিতায় গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা (জিজিইউএস)–ও মাঠ পর্যায়ে প্রদর্শনী প্লট ও পরামর্শ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর ফলে অনেক কৃষক আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নত জাতের বীজ ব্যবহার করে ভালো ফলন পেয়েছেন।
জিজিইউএস-এর কৃষি ইউনিটের টেকনিক্যাল অফিসার কৃষিবিদ মুরাদ হাসান চৌধুরী বলেন, “আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের উন্নত জাতের বীজ, ফসল ব্যবস্থাপনা এবং রোগ-বালাই নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি। কৃষকরা প্রযুক্তিনির্ভর চাষে আগ্রহী হচ্ছেন, ফলে ফলন ভালো হচ্ছে।”
দৌলতখান উপজেলার কৃষক রাসেল বলেন, “এবার ডালের ফলন ভালো হয়েছে। যদি বাজারে ভালো দাম পাই, তাহলে আগামী বছরও এই চাষ চালিয়ে যাব।”
একই এলাকার শেখ ফরিদ জানান, “আগে ছোট জাতের ডাল করতাম, লাভ হত না। এবার অফিস থেকে বড় জাতের ডাল পেয়েছি। চাষ করে লাভবান হয়েছি, সেই বীজ রেখে দিয়েছি, আগামী বছরও এটা দিয়েই চাষ করব।”
কৃষাণী আসিয়া বেগম বলেন, “এ বছর ডাল ভালো হয়েছে। তুলে শুকিয়ে সংরক্ষণ করছি। আগামী বছর এই বীজ দিয়েই আবার চাষ করব।”
বিলকিস বেগম বলেন, “নিজের জমিতে ডাল তুললে সবটা নিজেই পাই। আর অন্যের জমিতে কাজ করলে ১০ ভাগে এক ভাগ বা কখনো ১২ ভাগে এক ভাগ ডাল পাই।”
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ খায়রুল ইসলাম মল্লিক জানান, “এই মৌসুমে জেলায় ২৮,৬৫৫ হেক্টর জমিতে ডাল চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ জমিতে জনপ্রিয় বারি মুগ-৬ জাত চাষ হয়েছে। কিছু জায়গায় বিনা মুগ-৮ ও বারি মুগ-৭-এর চাষও হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, গড়ে প্রতি হেক্টরে ১.৪ মেট্রিক টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যেতে পারে। সামান্য বৃষ্টিপাত হয়েছে, তবে সেটা যদি আরেকটু আগে হতো তাহলে ফলন আরও ভালো হতো বলে মনে করেন তিনি।
“মাঠ পরিদর্শনে দেখা গেছে, অধিকাংশ কৃষক দুই থেকে তিনবার পর্যন্ত ফসল তুলেছেন। বাজারে এখন প্রতি কেজি মুগ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০৫ টাকা পর্যন্ত। কৃষকের লাভজনক হয়েছে এই চাষ,” বলেন উপপরিচালক।
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই আগামীতে ভোলায় ডাল চাষ ৩০ হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে যাক। কৃষক যেন ন্যায্য দাম পায়, সেজন্য কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সঙ্গে কাজ করে মার্কেট লিংকেজ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে।”