গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফলে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। সরকার পরিবর্তনের পর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সংসদ-সদস্য, মন্ত্রী, এবং দলীয় নেতাকর্মীরা বিপদে পড়েছেন। ছাত্র-জনতার উপর হামলার দায়ে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে তারা গ্রেপ্তার এড়াতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, প্রাণ ও গ্রেপ্তার এড়াতে অনেক নেতাকর্মী আকাশ, জল, এবং স্থলপথে ভারতে পালাচ্ছেন। পালানোর জন্য সীমান্ত এলাকাগুলোতে পাচারকারী চক্র সক্রিয় হয়েছে। তারা মোটা টাকা ও সোনার গহনা নিয়ে এসব নেতাকর্মীকে ভারতে পালাতে সহায়তা করছে। কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেটসহ সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে অধিকাংশ নেতাকর্মী ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয়সহ ভারতের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন।
সীমান্তের শিথিলতার সুযোগে বেশ কয়েকজন পালাতে সক্ষম হলেও বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) এবং পুলিশ এসব ঘটনা অস্বীকার করেছে। তবে বিজিবি সীমান্তে নজরদারি ও টহল জোরদার করেছে বলে জানিয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এর মধ্যে শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, কাজী জাফর উল্লাহ, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, মফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, এবং আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারসহ আরও অনেক নেতা রয়েছেন। কুমিল্লার সাবেক সংসদ-সদস্য বাহাউদ্দিন বাহার, তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসীন বাহার সূচনা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সম্প্রতি কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে ভারতে পৌঁছেছেন বলে জানা গেছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম ‘ওপি ইন্ডিয়া’র তথ্যমতে, তারা বর্তমানে কলকাতায় এক রাজনৈতিক নেতার আশ্রয়ে রয়েছেন এবং প্রতিদিন ১০ হাজার রুপি খরচ করছেন। এদিকে, সুপ্রিমকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকও সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করলে বিজিবির হাতে আটক হন। একটি ভিডিওতে তাকে ভারতের ভেতরে টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে দেখা গেছে। পরবর্তীতে বিজিবির কাছে তিনি স্বীকার করেন যে, ভারতে যাওয়ার জন্য ১৫ হাজার টাকার চুক্তি করেছিলেন, তবে সীমান্তে পাচারকারীদের দ্বারা প্রতারিত হন।
দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এই বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং পাচার চক্রগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হয়েছে।