সরকারি চাকুরীজীবী, ব্যাংকার, মুদি দোকানদার, আদম ব্যাপারী, তরকারি ব্যবসায়ীদের নিয়ে ছাত্রদলের আংশিক পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে চিঠিও পাঠিয়েছেন পদবঞ্চিতরা।
সম্প্রতি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ২৬০ সদস্যের আংশিক পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশিত হয়। এতে দেখা যায়, সিংহভাগই নিয়মিত শিক্ষার্থী নন। এই নেতাদের বেশির ভাগ স্নাতকে ভর্তি হয়েছিলেন এক যুগের বেশি সময় আগে। সেই হিসাবে তাঁদের নিয়মিত স্নাতক-স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ার কথা অন্তত অর্ধযুগ আগে। বয়সে বেশির ভাগই ত্রিশোর্ধ্ব। শুধু তাই নয়, এই কমিটিতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, অষ্টম শ্রেনী পাশ সনদহীন লোকজন রাখার অভিযোগও উঠেছে।
এমন পরিস্থিতিতে তারেক রহমানকে আজ বৃহস্পতিবার চিঠি দিয়েছে ছাত্রদলের পদ বঞ্চিতরা। পদবঞ্চিতদের পক্ষ থেকে মুহাম্মদ নাদির শাহ পাটওয়ারীর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, 'আপনার (তারেক) নির্দেশিত কেন্দ্র ঘোষিত, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের সকল কর্মসূচীতে জীবন বাজি রেখে জেল জুলম, পুলিশী নির্যাতন সহ্য করে প্রতিটি কর্মসূচিতে সফলভাবে অংশ গ্রহন করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং মহানগরের ছাত্রদলের নেতা কর্মীদের শ্রম ঘাম অস্বীকার করে ত্যাগী নির্যাতিত ছাত্রদল কর্মীদের বাদ দিয়ে আপনার নির্দেশনা উপেক্ষা করে সরকারি ও বেসরকারি চাকুরীজীবী, ব্যাংকার, মুদি দোকানদার, তরকারি ব্যবসায়ী, আদম ব্যাপারী, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, অষ্টম শ্রেনী পাশ সনদহীন, বিতর্কিত, নৈতিক স্খলন জনিত অপরাধে সম্পৃক্ত লোকজন দিয়ে সদ্য ঘোষিত ছাত্রদল কেন্দ্রীয় আংশিক পূর্নাঙ্গ ২৬০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। এছাড়াও গত কমিটির পদপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দের সকল যোগ্যতা থাকা সত্বেও অনেকেই ইচ্ছাকৃত ভাবে নতুন কমিটিতে বঞ্চিত করা হয়েছে।
আমরা সম্ভাবনাময় উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি উপেক্ষা করে নেতাকর্মীদের ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে পরিবারকে বঞ্চিত করেও নিজেদের জীবনের সোনালী সময় গুলো সংগঠনকে দিয়ে আদর্শের প্রতি অটুট থেকে আপনার প্রতি গভীর আস্থা রেখে রাজপথকে আকড়ে ধরে আছি। আমরা দীর্ঘদিন ত্যাগ ও শ্রমের মূল্যায়ন না পেয়ে আপনার কাছে মানবিক মূল্যায়ন প্রত্যাশার আকুল আবেদন করছি।
মাননীয় সাংগঠনিক অভিভাক মহোদয়ের কাছে সদ্য ঘোষিত ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের আংশিক কমিটিতে সদয় হস্তক্ষেপ করে ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন এবং বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে কার্যক্রমকে অতীতের ন্যায় গতিশীল এবং শক্তিশালী করার বিনীত অনুরোধ করছি।'
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যারা কমিটিতে পদ পেয়েছেন, তাদের মধ্যে যারা সবচেয়ে কনিষ্ঠ, তারাও স্নাতকে ভর্তি হয়েছেন প্রায় এক যুগ আগে। অনেকেরই এখন আর অনিয়মিত ছাত্রত্বও নেই। অর্থাৎ এখন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিও নেই। কেউ কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়মিত কোর্সে ভর্তি আছেন। নারীদের মধ্যেও কেউ কেউ অনিয়মিত কিংবা ‘ড্রপ আউট’ (শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়া) শিক্ষার্থী। মোটাদাগে ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির পদগুলোর প্রায় শতভাগই পড়াশোনায় অনিয়মিতদের দখলে। এরা দেশের ছাত্ররাজনীতিরও ক্ষতি করছে। সেইসঙ্গে দলের নেতাদের সুনজরে আসার লক্ষ্যে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড। এতে যেমন রাজনীতি চর্চাটাও ঠিকঠাক হচ্ছে না। আবার এসব শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারও রয়েছে হুমকির মধ্যে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মতোই তার ছেলে তারেক জিয়া এসব শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। কারণ যখন তাদের ক্যারিয়ার গড়ার সময় সেই সময় তারা দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে দেশ ও নিজের ক্ষতি করছে।